আল আমিন : আসন্ন পবিত্র রমজান মাসকে সামনে রেখে অস্থিরতা বিরাজ করছে নিত্যপণ্যের বাজারে। কিছুতেই কোন কাজ হচ্ছে না। দাম বাড়ছে তো বাড়ছেই। পণ্যমূল্য কমাতে আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য হ্রাস, এলসি মার্জিন শিথিল ও পণ্য আমদাতিতে শুল্ক কমানোসহ একাধিক উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজারে বাড়ানো হয়েছে তদারকি। তারপরও কমছে না নিত্যপণ্যের দাম। আর রমজান মাস ঘিরে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী অতি মুনাফার ছক সাজিয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে বর্তমানে সরবরাহ সংকট না থাকলেও কিছু অসাধু আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের একটি অংশ রমজানকে সামনে রেখে বাড়তি মুনাফা পেতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, দাম বাড়ানোর এই প্রবণতা আগামী ১১ মার্চ থেকে শুরু হতে হওয়া পবিত্র রমজানে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে এবং এটি বন্ধে ব্যবস্থা না নিলে রোজার মাসে বাজার অস্থির হয়ে উঠতে পারে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ গত মাসে প্রতিবেদনটি তৈরি করে বাণিজ্য, কৃষি ও খাদ্য মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট কয়েকটি কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছে। বাজারের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে এতে কিছু সুপারিশও করা হয়েছে।ওদিকে, বাংলাদেশের দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে সরকারবিরোধী আন্দোলনকারীরা জড়িত থাকতে পারে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, যারা পণ্য লুকিয়ে রেখে দাম বাড়ায় তাদের ‘গণধোলাই’ দেয়া উচিত। শুক্রবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।
বাজার পরিস্থিতির বিষয়ে অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা বিভিন্ন সময় বলেছেন, সরবরাহ ব্যবস্থার জটিলতা থাকায় একটি চক্র বাজার থেকে মুনাফা তুলে নিচ্ছে। এতে ধনী ও দরিদ্র শ্রেণির মানুষের তেমন সমস্যা না হলেও মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ চরম কষ্টে আছেন। এর সমাধানে সরকারকে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন তারা।তবে সব মিলিয়ে মানুষ স্বস্তিতে নেই। বন্দরবাজারে আসা একজন ক্রেতা বলেন, কোনো কিছুর দাম কমছে না। একবার বাড়লে সেটা আর কমে না। আমরা সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছি। আর সেটা দেখার কেউ নেই।
এদিকে, শুক্রবার সিলেটের বাজার ঘুরে দেখা গেছে বেড়েই চলেছে মুরগির মাংসের দাম। বাজারে অন্যান্য নিত্যপণ্যও চড়া দামে গিয়ে আটকে আছে। এ ছাড়া পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। রোজার বাজারে প্রায় প্রতিবছরই দাম বাড়ে চিনির। এবারও এ বতিক্রম নয়। পরশু লাল চিনি ২০ টাকা বাড়িয়ে ১৬০ টাকা করে স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। তবু দাম নাগালের বাইরে চিনির। তবে চিনির দাম কমাতে পণ্যটি আমদানিতে কিছুটা শুল্কছাড় দিয়েছে সরকার। তবে দামে তার কোনো প্রভাব পড়েনি। সিলেটে এখন এক কেজি খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকায়। গত বছর একই সময়ে দর ছিল ১১০ থেকে ১২০ টাকা।
ভোজ্যতেল চাল ও খেজুরের শুল্ক কর কমানো হয়েছে। কিন্তু বাজার চড়া। এছাড়া বাজারে চাল, ডাল, আটা, পেঁয়াজ, মাছ, মাংস ও ডিমের দাম এখনও চড়া।ব্রয়লার মুরগির কেজি ২২০ থেকে ২৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। শতক পেরিয়ে যাওয়া পেঁয়াজের দাম এখনও কমেনি। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১২৫ টাকায়। একইসঙ্গে চড়া দামে আদা ও রসুন বিক্রি হচ্ছে ২৪০ থেকে ২৬০ টাকা দরে।
খুচরা বাজারে নভেম্বরে প্রতি কেজি দেশি আদা বিক্রি হয় ২৮০-৩০০ টাকা। যা ডিসেম্বরে দাম কমে ২৪০-২৫০ টাকা হয়। তবে ফেব্রুয়ারিতে দাম বেড়ে ফের ২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।পাশাপাশি প্রতি কেজি ভালোমানের মসুর ডাল নভেম্বরে বিক্রি হয়েছে ১৩০ টাকা। ডিসেম্বরে বিক্রি হয়েছে ১৩৫ টাকা, আর ফেব্রুয়ারিতে বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা। প্রতি কেজি ছোলা নভেম্বরে বিক্রি হয়েছে ৮৫ টাকা। ডিসেম্বরে দাম বেড়ে বিক্রি হয়েছে ৯০-৯৫ টাকা। ফেব্রুয়ারিতে বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা।
ভোজ্যতেলের মধ্যে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল নভেম্বরে বিক্রি হয়েছে ১৫০ টাকা। ডিসেম্বরে বিক্রি হয়েছে ১৫৫ টাকা, আর ফেব্রুয়ারিতে দাম বেড়ে ১৬০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। বোতলজাত সয়াবিন তেলের মধ্যে নভেম্বরে প্রতি লিটার বিক্রি হয়েছে ১৬৮ টাকা, ডিসেম্বরে দাম বেড়ে ১৭০ টাকা ও ফেব্রুয়ারিতে বিক্রি হচ্ছে ১৭২ টাকা। তবে রোযার আগে তেল লিটার প্রতি ১০ টাকা কমানো ঘোষণা দিযেছে সরকার।
বাজার ঘুরে চালের বাজারেও অস্বস্থি দেখা যায়। বর্তমানে পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি মিনিকেট ৬৪ থেকে ৬৬ টাকা, ভালো মানের নাজিরশাইল ৭৬ থেকে ৭৮ টাকা, নিম্নমানের নাজিরশাইল ৬৪ থেকে ৬৮ টাকা বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে তা মানবেদে ৫/১০ টাকা বেশী।
প্রতি কেজি তিউনেশিয়ান খেজুর নভেম্বরে ৩০০ টাকা বিক্রি হলেও ডিসেম্বরে বিক্রি হয় ৪০০ টাকা। আর সেই একই খেজুর ফেব্রুয়ারিতে বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকা। বাজারে চড়া দামে আটকে আছে ব্রয়লার ও ফার্মের মুরগির ডিমের দাম। প্রতি হালি বাদামি ডিম ৪৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে বড় বাজারে। আর পাড়া মহল্লার দোকানে প্রতি হালি ডিমের দাম ৫০ টাকা, ডজন ১৫০ টাকা।বসন্তের শুরুতে অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় সবজীর দাম বেশি। মেঘাচ্ছন্ন আবহাওয়ার কারণে অন্য শুক্রবারের তুলনায় বাজারে গতকাল ক্রেতার উপস্থিতিও কিছুটা কম লক্ষ্য করা গেছে।
Leave a Reply