মুকিত রহমানী : প্রতি বছরই সিলেট নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে বিভিন্ন খাল উদ্ধার, খনন ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন নিয়ে কাজ করে সিটি করপোরেশন। কিন্তু জলাবদ্ধতা থেকে স্থায়ী মুক্তি পাচ্ছেন না নগরবাসী। ২০২২ সালে দুই দফা বন্যায় নগরবাসী জলাবদ্ধতায় চরম ভোগান্তিতে পড়েন। অথচ আগের বছরই ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নে ১২৯ কোটি টাকা ব্যয়ে উন্নয়নকাজ করে সিটি করপোরেশন (সিসিক)। এক যুগে খাল ও ড্রেনেজ সংস্কারে কম করে হলেও হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতির তেমন অগ্রগতি হয়নি। এ অবস্থায় বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে এবার ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছে সিসিক। নগরীর ব্যস্ততম সড়কগুলোর পাশ ও নিচ দিয়ে প্রবাহিত ছড়া-খালের মুখে রাস্তার প্রশস্ত ড্রেনের সংযোগকাজ শুরু করা হয়েছে। ড্রেনকে সেসব ছড়া-খালের সঙ্গে যুক্ত করে ডাইভারশন করা হচ্ছে।
নগরীর তিনটি সড়কের চারটি স্থানে সম্প্রতি এ কাজ শুরু করা হয়। এতে ব্যয় হচ্ছে প্রায় সাড়ে ৪০০ কোটি টাকা। প্রকল্প শেষ হলে দ্রুত পানি নিষ্কাশন ও জলাবদ্ধতা কমে আসবে বলে মনে করছেন সিসিকের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আলী আকবর। তিনি জানান, নগরবাসী যদি ড্রেন ও ছড়া-খালে ময়লা– বিশেষ করে পলিথিনজাতীয় কিছু না ফেলেন, তা হলে প্রকল্প এলাকার মানুষ জলাবদ্ধতায় পড়বেন না। রাস্তার নিচে বড় করে ড্রেন ও ডাইভারশন দেওয়ায় পানি দ্রুত নিষ্কাশন হবে।
গত মাসে চারটি স্থানে এ কাজ শুরু হয়। এতে রাস্তাগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পবিত্র রমজানে ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ। বিভিন্ন রাস্তায় ব্যাপক যানজট দেখা দিচ্ছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে কাজ শেষ না করতে পারলে ঈদবাজারে বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
নগরীতে রিকাবীবাজার-চৌহাট্টা সড়কের মাঝখানে রাস্তার নিচে স্থানীয় খালের সঙ্গে বড় করে কালভার্ট তথা আড়াআড়ি করে ডাইভারশন নির্মাণকাজ চলছে। চৌহাট্টা-আম্বরখানা সড়কের দরগাগেটের সামনে ও আম্বরখানা পয়েন্টের রাস্তার নিচের ড্রেন ও ডাইভারশন, সোবহানীঘাট মোড় এলাকার রাস্তা ড্রেনের সঙ্গে প্রশস্ত করে স্থানীয় খালের সঙ্গে সংযুক্তকরণ কাজ চলছে। রিকাবীবাজার-চৌহাট্টা সড়কে এক পাশের কাজ শেষ হয়েছে। এতে ব্যয় হচ্ছে ৮৮ লাখ টাকা। দরগাগেট নুরজাহান ক্লিনিকের সামনে থেকে সিভিল সার্জন অফিসের সামনে পর্যন্ত রাস্তার নিচে ড্রেন তৈরি করা হচ্ছে। কাজ শেষ পর্যায়ে। মূল ড্রেনের পাশে রাস্তার নিচে সাড়ে ১০ ফুট প্রশস্ত ও ৫৭০ ফুট দৈর্ঘ্য ড্রেন করা হচ্ছে। এ ছাড়া সোবহানীঘাট মোড় এলাকায় রাস্তার পাশে ১২০ ফুট দৈর্ঘ্য রাস্তা ড্রেনের ওপরে নিয়ে প্রশস্ত করা হচ্ছে। এ দুটি কাজে ব্যয় হচ্ছে ৪৩৭ কোটি টাকা। আম্বরখানা মোড়ে রাস্তার নিচে ডাইভারশন করে স্থানীয় খালের সঙ্গে যুক্ত করার কাজটি করা হচ্ছে আগের একটি প্রকল্প থেকে। সব মিলিয়ে চারটি কাজে প্রায় সাড়ে ৪০০ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে।
সিসিক সূত্রমতে, নগরীতে ছোট-বড় মিলিয়ে ১৮টি প্রবহমান ছড়া ও খাল রয়েছে, যা সুরমা নদীতে গিয়ে মিলিত হয়। ২০০৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে জলাবদ্ধতা নিরসনে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ব্যয় হচ্ছে ২০১২ সালে ৪৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা, ২০১৩ সালে ২ কোটি ৭০ লাখ, ২০১৪ সালে ৭৯ কোটি ৮০ লাখ, ২০১৫ সালে ১১ কোটি, ২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ২৩৬ কোটি, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ২৬৯ কোটি ৫০ লাখ, ২০২০-২১ অর্থবছরে ২৯৩ কোটি ৫৯ লাখ, ২০২১-২২ অর্থবছরে ২৯৮ কোটি ৪৬ লাখ ৮৭ হাজার টাকা।
সিসিকের প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান বলেন, রমজান মাসে কাজ চলমান থাকায় সাময়িক ভোগান্তির জন্য তিনি দুঃখিত। তাঁর আশা, ১৫ দিনের মধ্যে কাজ শেষ হবে।
Leave a Reply