ওয়েছ খছরু : সিলেট নগরে শৃঙ্খলায় বাঁধা সিএনজি অটোরিকশা। একে তো বৈধ অটোরিকশার সমপরিমাণ রয়েছে অবৈধ অটোরিকশা, তার উপর অর্ধশতাধিক অবৈধ স্ট্যান্ড নগরের শৃঙ্খলায় বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নগরে চলমান হকার সমস্যা দূর হওয়ার পর অটোরিকশা সমস্যার চিত্রটি ফুটে উঠেছে। আর যানজটেরও অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে সিএনজি, লেগুনা স্ট্যান্ড। এই অবস্থায় হার্ডলাইনে গেছে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ ও সিলেট সিটি করপোরেশন। শৃঙ্খলায় দেয়া হয়েছে কিছু শর্ত। শর্তের মধ্যে রয়েছে; নগর জুড়ে ছড়িয়ে থাকা অবৈধ সিএনজি স্ট্যান্ডগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট ছাড়া মোড়ে মোড়ে থাকা স্ট্যান্ড অপরসারণ, যেসব এলাকায় স্ট্যান্ড থাকবে সেসব এলাকায় গাড়ির সংখ্যা কমিয়ে রাখা। পাশাপাশি প্রতিটি সিএনজি গাড়িতে মালিকের নাম লিখে রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এসব নির্দেশনার পর পুলিশ কড়াকড়ি আরোপ করায় সিএনজি শ্রমিকরা শনিবার রাতে মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওই বৈঠকে মেয়র নিজেও জানিয়েছেন, পরিবহন শ্রমিকরা নিজো শৃঙ্খলায় ফিরলে পুলিশসহ সিটি করপোরেশন সহযোগিতা করবে।
আর শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজ করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী জানিয়েছেন, ‘এই নগর নিয়ে অনেকেই ভাবছেন। কিন্তু অতীতে তেমন কাজ হয়নি। হকার সমস্যার সমাধান হওয়ার পর সিএনজি অটোরিকশার দৌরাত্ম্যের বিষয়টি সামনে এসেছে। এটিরও সমাধান হবে। এই নগর শৃঙ্খলায় ফিরবে বলে জানান তিনি।’ সিলেট নগর ও আশপাশের এলাকায় সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে সমস্যা প্রকট। পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের তথ্য মতে, ২০১৪ সাল পর্যন্ত দেয়া রেজিস্ট্রেশনের হিসেবে সিলেটে বৈধ সিএনজি অটোরিকশার সংখ্যা ১৯ হাজার ২০০টি। কিন্তু বাস্তবে নগরে চলছে প্রায় ৪০ হাজার সিএনজি অটোরিকশা। অবৈধ সিএনজি অটোরিকশার মধ্যে রয়েছে অনটেস্ট, চোরাই ও অন্য জেলার গাড়ি। এসব অবৈধ সিএনজি অটোরিকশা এখন নগরবাসীর গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নগরের কোর্ট পয়েন্ট, টিলাগড় পয়েন্ট, আম্বরখানা পয়েন্ট, হুমায়ূন রশীদ চত্বর, কদমতলী, কদমতলী নতুন ব্রিজসহ ১০-১২টি স্থানে গুরুত্ব বিবেচনায় সিএনজি অটোরিকশা স্ট্যান্ড রয়েছে। কিন্তু এখন নগরে সিএনজি ও লেগুনার স্ট্যান্ডের সংখ্যা অর্ধশতাধিক। হকার উচ্ছেদের পর সিএনজি অটোরিকশার অবৈধ স্ট্যান্ডের কারণে নগরে যানজট কমছে না। নিয়ন্ত্রহীনভাবে, শৃঙ্খলা না মেনেই সড়ক দখল করে সিএনজি অটোরিকশার স্ট্যান্ড গড়ে তোলা হয়েছে। আর এসব স্ট্যান্ডে রাখা হয়েছে অবৈধ সিএনজি অটোরিকশা। নগরের জিতু মিয়ার পয়েন্ট। এক পয়েন্টে ৩টি অটোরিকশা স্ট্যান্ড। কাজিরবাজার ব্রিজের অর্ধেক দখল করে স্ট্যান্ড গড়ে তোলা হয়েছে। আরেকটি স্ট্যান্ড রয়েছে মদিনা মার্কেটগামী রুটের মুখে। এ ছাড়া বন্দরগামী রাস্তার মোড়েও সব সময় দাঁড়িয়ে থাকে সিএনজি অটোরিকশা। আর এসব অটোরিকশার কাছ থেকে পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা নিয়মিত চাঁদাবাজি করে থাকে। একই অবস্থায় কোট পয়েন্ট ও সিটি পয়েন্টেও। একই এলাকায় ৪টি সিএনজি অটোরিকশা স্ট্যান্ড গড়ে তোলা হয়েছে। একই অবস্থা ধোপাদীঘিরপাড়, টিলাগড়, আম্বরখানা, শাহী ঈদগাহ, মদিনা মার্কেটসহ কয়েকটি স্ট্যান্ডের। প্রতিটি সড়কের মোড়ে মোড়ে স্ট্যান্ড গড়ে তোলা হয়েছে। জিতু মিয়ার পয়েন্ট এলাকার ব্যবসায়ী আব্দুল মতিন জানিয়েছেন, আগে সড়কে সিএনজি চলতো। কোনো স্ট্যান্ড ছিল না। এখন একই স্থানে ৩টি স্ট্যান্ড গড়ে তোলা হয়েছে। এতে করে ওই এলাকায় তীব্র যানজট দেখা দিচ্ছে। প্রতিদিন পরিবহন শ্রমিকদের নিয়োজিত দুই ব্যক্তি ওখানে চাঁদাবাজি করে। তারা সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোর চেয়ে চাঁদাবাজিতে বেশি ব্যস্ত থাকেন। এখানে মাত্র একজন ট্রাফিক পুলিশ নিয়োজিত থাকেন। তার দ্বারা শৃঙ্খলা ফেরানো কষ্টকর হচ্ছে। নগরের বৈধ সিএনজি অটোরিকশার শ্রমিকরা জানিয়েছেন, অবৈধ সিএনজি অটোরিকশা পুলিশি টোকেনে চলে। ফলে তারা কম টাকায় ভাড়া টানতে পারে। বৈধ সিএনজি অটোরিকশার পক্ষে সেটি সম্ভব নয়। এদিকে, সিলেট নগরে মেয়র আনোয়ারুজ্জামানের সঙ্গে বৈঠকের পর সিএনজি অটোরিকশা শ্রমিকদের পক্ষ থেকে শৃঙ্খলা ফেরাতে পরিবহন শ্রমিকদের পক্ষ থেকে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটির সদস্যরা নিজেদের মধ্যে শৃঙ্খলা ফেরানোর কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন পরিবহন শ্রমিকরা। সিলেট জেলা সিএনজি অটোরিকশা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি জাকারিয়া আহমদ জানিয়েছেন, ‘সিলেট নগরে গণপরিবহন বলতে সিএনজি অটোরিকশাকে বুঝায়। প্রয়োজনীয় স্থানে ১৫/২০টি স্ট্যান্ড রয়েছে। এসব স্ট্যান্ডে এখন গাড়ি কমানো হচ্ছে। এক লাইন করে সড়কে গাড়ি থাকবে। পাশাপাশি সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে পরিবহন শ্রমিকরা কাজ করছে।’ তিনি জানিয়েছেন, ‘নগরের মোড়ে মোড়ে থাকা সিএনজি অটোরিকশার স্ট্যান্ড থাকবে না। আর স্ট্যান্ডে গাড়ি না থেকে রাস্তায় চলবে। ঈদ পর্যন্ত আপাতত এই উদ্যোগে শ্রমিকরা রয়েছে। ঈদের পর স্থায়ী স্ট্যান্ডের ব্যাপারে আলোচনা হবে বলে জানান তিনি।’ এদিকে সিলেট মেট্রোপলিটন ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে প্রতিদিনই অভিযান চালানো হচ্ছে। পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ ছাড়াও প্রতিটি থানা ও ফাঁড়ি এলাকার পুলিশ সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে অবৈধ সিএনজি অটোরিকশা স্ট্যান্ড, ভাসমান হকারদের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করেছে। ভাসমান ইফতার বিক্রেতাদেরও সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়া হচ্ছে। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি (মিডিয়া) সাইফুর রহমান মানবজমিনকে জানিয়েছেন, নগরের হকার উচ্ছেদের পরপরই পুলিশ কমিশনারের তরফ থেকে ট্রাফিক বিভাগ ও থানা, ফাঁড়ি পুলিশকে অবৈধ দখল উচ্ছেদে কাজ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সবাই এখন নগরের শৃঙ্খলা ফেরাতে কাজ করছে। যেখানে অভিযানের প্রয়োজন সেখানে অভিযানও দেয়া হচ্ছে।’ এদিকে, সিলেট মেট্রো ও জেলার সিএনজি অটোরিকশা পৃথকীকরণ, নতুন করে কালার মার্কিং দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছেন সিএনজি অটোরিকশার মালিকরা। সিলেট জেলা সিএনজি অটোরিকশা মালিক সমিতির সভাপতি শাহ মো. দিলওয়ার হোসেন জানিয়েছেন, সিএনজি অটোরিকশাতে এখন মালিকের নাম সংযোজনের বিষয়টি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কোন অটোরিকশার মালিক কে, সেটি এখন চিহ্নিত করা হবে। পাশাপাশি কালার মার্কিং এবং নগর ও জেলার গাড়ি পৃথকীকরণের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান তিনি।
Leave a Reply