ঢাকা সংবাদাতা : বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেছেন, গণতন্ত্র বারবার জীবিত হয়। গণতন্ত্র ফিরে আসবে রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে। রাজপথ উত্তপ্ত হওয়া শুরু হয়েছে। তাই নেতাকর্মীদের আগামীতে আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। আজ মঙ্গলবার বিকেলে রাজশাহীতে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ সব কথা বলেন তিনি।
ইকবাল মাহমুদ টুকু বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য রাজপথের আন্দোলনের বিকল্প নেই। রাজপথের আন্দোলনের মাধ্যমেই এর সমাধান আসতে হবে। আন্দালনের জন্য নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকার আহবান জানান বিএনপির এই নেতা। ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্টের বীরউত্তম খেতাব তার কর্মের জন্য পেয়েছিলেন। এই খেতাব কেড়ে নেওয়ার ক্ষমতা কারোর নেই। আগামীতে জিয়াউর রহমানকে বীরশ্রেষ্ঠ খেতাব দেওয়া যায় কিনা তা ভাবতে হবে।
বিএনপি নেতা বলেন, প্রধানমন্ত্রী এক ভার্চুয়াল মিটিংয়ে বলেছেন, আমার জীবন স্বার্থক, আমি জনতার কাছে তাদের গণতন্ত্র ফেরত দিয়েছি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করতে চাই, আপনাকে কেন জনগণের ওপর নির্ভর না করে জনগণের ট্যাক্সের টাকায় তাদের কর্মচারী পুলিশ অফিসার, ডিসিদের ওপর নির্ভর করতে হয়? তাহলে কি আপনার গণতন্ত্রের ডেফিনেশন পরিবতন হয়ে গেল?
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে টুকু বলেন, আপনি বলেন, আমি উন্নয়ন করেছি, উন্নয়ন করেছি’। আপনি উন্নয়ন করেছেন, সেই জন্য তো ফরিদপুরের ছাত্রলীগের সভাপতি দুই হাজার কোটি টাকা পাচার করেছেন। একটা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি যদি এতো টাকা পাচার করে তাহলে প্রধানমন্ত্রী, আপনার রাঘব বোয়ালরা কত টাকা পাচার করেছে বাংলাদেশের মানুষ সেই হিসাব চায়।
পুলিশের অনুমতি নিয়ে বিকেলে রাজশাহী নগরের পাঠানপাড়া এলাকায় নাইস কনভেনশন সেন্টারে নির্দলীয় নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে এ সমাবেশের আয়োজন করে বিএনপি। এতে সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী মহানগর বিএনপির সভাপতি ও সাবেক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। আরো বলেন, আমরা রাজশাহীর এই সমাবেশ করতে চাইলাম মাদ্রাসা মাঠে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী এটিকে সংকুচিত করে নাইস কনভেনশন সেন্টারে করতে দিলেন। আপনি হয়তো ভেবেছেন, বিএনপির সমাবেশে লোক হয় না। আপনি নাকি ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছেন, আপনার ডিজিটাল ক্যামেরা দিয়ে দেখেন সমাবেশে লোকে লোকারণ্য।
সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, ফেরাউনসহ সবার পতন হয়েছে। আপনারও পতন হবে এই রাজশাহী থেকে। বাংলাদেশে ৫২ সালে রাজপথে ফায়সালা হয়েছে। ৫৪ থেকে ৬৯ এর রাজপথে ফায়লাসা হয়েছে। ৯১ -এ রাজপথে ফায়সালা হয়েছে। প্রস্তুত হন এই রাজপথে ফায়সালা হবে। গণতন্ত্র হারিয়ে যাওয়ার জিনিস না, কারো পকেটের মোয়া না। গণতন্ত্র বার বার জীবিত হয়।
পুলিশ বাহিনীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে ২৫ মার্চ রাতে বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনী নিজেদের জীবন বাজি রেখে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো। কিন্তু আজ স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসে দেখছি সেই পুলিশ বাহিনী আর আজকের পুলিশ বাহিনীর মধ্যে কোনো মিল নাই। তখনকার পুলিশ বাহিনী ছিল বাঙালি জাতির অধিকার আদায়ের অগ্রসৈনিক। ২৫ তারিখ রাতে সবচেয়ে বেশি প্রাণ দিয়েছিল রাজারবাগ পুলিশ লাইনের সিপাহীরা। আজকে বাংলাদেশের পুলিশ একটা দলের কর্মী বাহিনীতে পরিণত হয়েছে।
মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শফিকুর রহমান মিলনের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হারুন অর রশিদ এমপি, বিএনপির সাংগঠনি সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নাদিম মোস্তফা, ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাক হোসেন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়রপ্রার্থী হিসেবে অংশ নেওয়া তাবিথ আউয়াল প্রমুখ।
ইশরাক হোসেন বলেন, জাতীয় নির্বাচনের নামে দেশে কী হয়েছে তা আপনারা দেখেছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছরে একটা আনন্দঘন ও আবেগঘন পরিবেশ তৈরি হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু তার পরিবর্তে দেশে এই অনির্বাচিত সরকার গুম, খুন, হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, মানুষের মৌলিক অধিকার হরণ, মানুষের কথা বলার অধিকার হরণ, ভোটের অধিকার হরণ করেছে। মানুষের এসব অধিকার ফিরিয়ে আনতে আজ আমরা স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে আন্দোলনের বার্তা নিয়ে এসেছি।
ইশরাক হোসেন বলেন, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট নামে কালো আইন করেছে সরকার। জিয়াউর রহমানের খেতাব নিয়ে সরকার তামাশা করছে। আজ বাংলাদেশে কোন রাজনৈতিক নেতৃত্ব সরকারের ক্ষমতায় নাই। তাই এই অবৈধ সরকারকে উৎখাত করে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে।
বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে সমাবেশ লোকসমাগম ঠেকাতে সোমবার থেকে রাজশাহীর সকল রুটে বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। রাতভর বিএনপির নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করার জন্য পুলিশ অভিযান চালিয়েছে। এর আগে বিএনপি নেতারা সমাবেশ করার জন্য রাজশাহী মহানগরীতে তিনটি স্থানে বিভাগীয় সমাবেশ করার জন্য পুলিশের কাছে অনুমতি চায়। কিন্তু পুলিশ বিএনপির নির্ধাতির স্থানে সমাবেশ করার অনুমতি না দিয়ে নাইস কনভেনশন সেন্টারে অনুমতি প্রদান করে।
Leave a Reply