1. bnn.press@hotmail.co.uk : bhorersylhet24 : ভোরের সিলেট
  2. zakirhosan68@gmail.com : zakir hosan : zakir hosan
ফাল্গুনের হাত ধরে এলো বসন্ত - Bhorersylhet24

ফাল্গুনের হাত ধরে এলো বসন্ত

রিপোর্টার নাম
  • প্রকাশিত : সোমবার, ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪
  • ২০ বার ভিউ

আফসানা রীপা  : ‘আহা, আজি এ বসন্তে এত ফুল ফুটে,এত বাঁশি বাজে, এত পাখি গায়, সখীর হৃদয় কুসুমণ্ডকোমল- কার অনাদরে আজি ঝরে যায়।’  আজ পহেলা ফাল্গুন, বসন্তের প্রথম দিন। কোকিলের মায়াবী সুরে জেগে ওঠার দিন। আর এই দিনে বারবার মনে বেজে ওঠে কবিগুরুর লেখা এই গানের পঙক্তিগুলো। মাঘের হালকা হাওয়ার বন্ধন থেকে জীর্ণতা সরিয়ে ফুলে ফুলে সেজে ওঠার মুহূর্ত আজ থেকেই শুরু।

শীতের হাওয়ার বিদায়ের পথ ধরে সহাস্যে উঁকি দেয় ঋতুরাজ বসন্তের হাওয়া। মাতাল হাওয়া। যে হাওয়ার ছোঁয়ায় প্রকৃতি নেচে ওঠে। দুলে ওঠে মানুষের মন। এ মাতাল হাওয়ায় পাখণ্ডপাখালির মনেও কি শিহরণ জাগে? হয়তো জাগে।

ফুলেল বসন্ত, মধুময় বসন্তের আগমন মানেই তরুণ হৃদয়ে নতুন প্রাণের সঞ্চার। বসন্তের ছোঁয়ায় চারদিকে যেন সাজসাজ রব পড়ে যায়। বসন্ত অনেক ফুলের বাহারে সজ্জিত হলেও গাঁদা ফুলের রংকেই এদিনে নিজেদের পোশাকে ধারণ করে তরুণ-তরুণীরা। খোঁপায় শোভা পায় গাঁদা ফুলের মালা। সেই সঙ্গে লাল আর হলুদের বাসন্তী রঙে প্রকৃতির সঙ্গে নিজেদের সাজিয়ে বসন্তের উচ্ছলতা ও উন্মাদনায় ভাসে বাঙালি। সব কুসংস্কারকে পেছনে ফেলে, বিভেদ ভুলে, নতুন কিছুর প্রত্যয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার বার্তা নিয়ে বসন্তকে বরণ করে নিতে তাই প্রকৃতির রঙে রং মিলিয়ে সবাই যেন মেতে উঠেছে বসন্ত উৎসবে।

তাই তো বাঙালির প্রিয় কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় বসন্তকে প্রতিভাত করে গেছেন- ‘ফুল ফুটুক না ফুটুক, আজ বসন্ত’ এই একটি বাক্যেই। বসন্তের এই আনন্দযজ্ঞ থেকে বাদ যায় না গ্রাম্যজীবনও। আমের মুকুলের সৌরভে আর পিঠাপুলির বাহারে গ্রামবাংলাতেও এখন বসন্তের আমেজ একটু বেশিই ধরা পড়ে। বসন্তকে তারা আরো নিবিড়ভাবে বরণ করে।

বসন্তের আগমনে ভ্রমরও করছে খেলা। গাছে গাছে পলাশ আর শিমুলের মেলা। শীতের খোলসে ঢুকে থাকা কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, নাগলিঙ্গম এখন অলৌকিক স্পর্শে জেগে ওঠে। মৃদুমন্দা বাতাসে ভেসে আসা ফুলের গন্ধে বসন্ত জানিয়ে দিচ্ছে, সত্যি সত্যি সে ঋতুর রাজা। বসন্ত শুধু অশোক-পলাশ-শিমুলেই উচ্ছ্বাসের রং ছড়ায় না, এই বসন্তেই আখ আরকাটা, হিমঝুড়ি, রক্তকাঞ্চন, কুসুম, কুরচি, পলাশ, দেবদারু, নাগেশ্বরসহ নানা রকমের ফুল ফোটে।

ফাল্গুন নিয়ে কবিগুরু অনেক গান লিখেছেন। গানে গানে অশোক-পলাশ ফুল নিয়ে লিখেছেন-

ফাগুন, হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে দান-

তোমার হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে দান-

আমার আপনহারা প্রাণ আমার বাঁধন-ছেঁড়া প্রাণ॥

তোমার অশোকে কিংশুকে

অলক্ষ্য রঙ লাগল আমার অকারণের সুখে,

তোমার ঝাউয়ের দোলে

মর্মরিয়া ওঠে আমার দুঃখরাতের গান॥

পূর্ণিমাসন্ধ্যায় তোমার রজনীগন্ধায়

রূপসাগরের পারের পানে উদাসী মন ধায়

যৌবনের উদ্দামতা বয়ে আনার বসন্ত আর আনন্দ, উচ্ছ্বাস ও উদ্বেলতায় মন-প্রাণ কেড়ে নেওয়ার দিন আজ। ঋতুরঙ্গময়ী রূপসী বাংলা, বঙ্গ প্রকৃতির ঋতুরঙ্গে তার কী ছন্দময়, সংগীতময়, অনুরূপ রূপবদল! ঋতু পরিবর্তনের বর্ণবিচিত্র ধারাপথে নিয়ত উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে তার অন্তহীন রূপের খেলা। অনুপম বৈচিত্র্যময় ঋতুরঙ্গের এমন উজ্জ্বল প্রকাশ বাংলাদেশ ছাড়া আর কোথাও নেই।

তাই তো বসন্তের বিদায় নিয়ে ভারাক্রান্ত হয়ে কবিগুরু লিখেছেন-

চলে যায় মরি হায় বসন্তের দিন।

দূর শাখে পিক ডাকে বিরামবিহীন॥

অধীর সমীর-ভরে উচ্ছ্বাসি বকুল ঝরে,

গন্ধ-সনে হল মন সুদূরে বিলীন॥

পুলকিত আম্রবীথি ফাল্গুনেরই তাপে,

মধুকরগুঞ্জরনে ছায়াতল কাঁপে।

কেন আজি অকারণে সারা বেলা আনমনে

পরাণে বাজায় বীণা কে গো উদাসীন।

লেখক : সাংবাদিক

নিউজ শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *