নিজস্ব সংবাদদাতা : সিলেট নগরীর ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে ও যানজট নিরসনে ২৮ বছর আগে নগরীর বিভিন্ন মোড়ে স্থাপন করা হয়েছিল ট্রাফিক সিগন্যাল বাতি। তবে স্থাপনের পর থেকে আজ পর্যন্ত একটি দিনের জন্যও কাজে লাগেনি এই বাতিগুলো। এক দিনের জন্যও জ্বলেনি কোনো বাতি।
২০১৭ সালে দেশের দুটি নগরকে ডিজিটাল সিটি হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। সে লক্ষ্যে বিভিন্ন উদ্যোগও নেওয়া হয়। তবে এই ‘ডিজিটাল নগরে’ ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এখনো রয়ে গেছে অ্যানালগ। এখনো হাতের ইশারায় নগরীতে চলাচলকারী যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করতে হচ্ছে ট্রাফিক পুলিশকে।
সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৬ সালে ‘মাঝারি শহর উন্নয়ন প্রকল্প’-এর আওতায় যানবাহন নিয়ন্ত্রণের জন্য নগরীর ৬টি ব্যস্ততম পয়েন্টে স্থাপন করা হয় ট্রাফিক সিগন্যাল বাতি। ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে নগরীর চৌহাট্টা, রিকাবিবাজার, নয়াসড়ক, সুরমা মার্কেট, নাইওরপুল ও আম্বরখানা পয়েন্টে সিগন্যাল বাতি লাগানো হয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো দিন ব্যবহৃত হয়নি এসব বাতি।
সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা জানান, তৎকালীন সময়ে ট্রাফিক পুলিশের আপত্তি ও যান্ত্রিক ক্রটির কারণে সিগন্যাল বাতি কার্যকর করা যায়নি। পরবর্তী সময় এগুলো সংস্কারের জন্য বাজেটে আলাদা খাত রাখা হলেও বরাদ্দ না পাওয়ায় সংস্কার করা হয়নি।
সরেজমিনে নগরীর ট্রাফিক সিগন্যাল বাতি লাগানো ৬টি পয়েন্ট ঘুরে দেখা যায়, রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ট্রাফিক সিগন্যাল বাতির খুঁটিগুলোর একেবারেই জীর্ণ দশা। মরিচা আর শ্যাওলা জমেছে পুরো খুঁটিজুড়ে। তবু এগুলো এখনো দণ্ডায়মান আছে। তবে চুরি হয়ে গেছে লাল, সবুজ, হলুদ বাতিগুলো।
সিগন্যাল বাতি না থাকায় এখনো নগরীতে হাতের ইশরায়ই যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করতে হচ্ছে ট্রাফিক পুলিশকে। পুলিশের লোকবল সংকট ও ক্রমবর্ধমান যানবানের কারণে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খেতে হচ্ছে পুলিশকে। আর দিনভর নগরীর বিভিন্ন মোড়ে লেগে থাকছে অসহনীয় যানজট।
এ ব্যাপারে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের আহ্বায়ক ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘এই সিগন্যাল বাতিগুলো হচ্ছে রাষ্ট্রীয় অর্থ অপচয়ের একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ। বাতিগুলো যদি কাজে না-ই লাগানো হবে, তবে এত টাকা খরচ করা হলো কেন?’ তিনি বলেন, নগরীর যানজট ও যানবাহন নিয়ন্ত্রণের জন্য নগরীর প্রতিটি মোড়ে সিগন্যাল বাতি লাগানো ও ট্রাফিক পুলিশের আধুনিকায়ন করা প্রয়োজন।
এ ব্যাপারে সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (ট্রাফিক) মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘সিগন্যাল বাতি চালু হলে আমাদের পুলিশ সদস্যদের কাজ একটু সহজ হতো। সারা দিন সড়কে দাঁড়িয়ে হাত নাড়াতে হতো না।’ তিনি বলেন, সিগন্যাল লাইট কেন চালু হয়নি বা চালু হবে কী না, তা আমরা বলতে পারব না। এটি সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব। তবে কেবল লাইট চালু করলেই যানজট নিরসন হবে না। এ জন্য ফুটপাত থেকে হকার সরানো, সব মার্কেটে পার্কিং ব্যবস্থা চালু, নগর থেকে সবজি বাজার স্থানান্তর, নগরীর মোড়গুলোতে নির্মিত স্থাপনা ট্রাফিকবান্ধব করে গড়ে তোলাসহ আরও কিছু উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।
সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, প্রথম দিকে ট্রাফিক পুলিশের আপত্তি, অর্থাভাব ও যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে সিগন্যাল বাতিগুলো চালু করা যায়নি। পরবর্তী সময়ে কয়েকটি বাজেটে এগুলো সংস্কারের জন্য আলাদা খাত রাখা হলেও বরাদ্দ না পাওয়ায় সংস্কার করা সম্ভব হয়নি।
তিনি বলেন, বাজেট ঘোষণার সময় আমরা অনেক খাতই সংযুক্ত করি। কিন্তু তা বাস্তবায়নের জন্য সরকারি বরাদ্দের ওপর নির্ভর করতে হয়। সরকার থেকে বরাদ্দ না পেলে এই কাজগুলো করা যায় না। দৈনিক সিলেট ডটকম
Leave a Reply