1. bnn.press@hotmail.co.uk : bhorersylhet24 : ভোরের সিলেট
  2. zakirhosan68@gmail.com : zakir hosan : zakir hosan
যে সব কারণে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয় - Bhorersylhet24

যে সব কারণে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়

রিপোর্টার নাম
  • প্রকাশিত : মঙ্গলবার, ৯ এপ্রিল, ২০২৪
  • ১৯ বার ভিউ

জাওয়াদ তাহের: সুখময় দাম্পত্য জীবন আল্লাহপ্রদত্ত নিয়ামত। একজন নারী তার সব কিছু ছেড়ে চলে আসে অন্যের বাড়িতে। যে শিকড়ে সে বেড়ে উঠেছে, সে শিকড় উপড়ে চলে যায় অন্যের আশ্রয়ে। শুরু হয় দাম্পত্য জীবনের পথচলা।

এই দাম্পত্য জীবনকে সুখময় করতে উভয়ের কিছু কর্তব্য রয়েছে। অনেক সময় ছোট ছোট ভুলের কারণে অনেক বড় ক্ষতি ডেকে আনে। এর মধ্যে স্বামীর কিছু কিছু ছোট ছোট ভুল আছে। নিচে সে বিষয়ে আলোচনা করা হলো—সময় না দেওয়াস্ত্রীকে সময় না দেওয়া, তাকে উপেক্ষা করে চলা।

তার সঙ্গে বসলেই মন খারাপ করে কথা বলা—এগুলো আমাদের যুব সমাজের অনেকের মধ্যেই আছে। অথচ বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে খোশগল্প ইত্যাদি সবই চলে আনন্দচিত্তে। কিন্তু নিজের স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার একদম ফুরসত হয় না। গভীর রাত পর্যন্ত আড্ডা দিয়ে ঘরে আসার কারণে নিজের সংসারকে ধীরে ধীরে প্রাণহীন করে তোলে।

নবীজি (সা.) জাবির (রা.)-কে বলেন, ‘কুমারী বিয়ে করলে না কেন? তুমি তার সঙ্গে খেলতে, সেও তোমার সঙ্গে খেলত। তুমি তাকে হাসাতে, সেও তোমাকে হাসাত।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৩৬৭)
স্ত্রীকে অপমান করা :
স্ত্রীর সামান্য দোষত্রুটি দেখলেই তাকে অপমান করা কিংবা বকাঝকা করা, এটি অত্যন্ত ঘৃণিত স্বভাব। স্বামী হয়তো মনে মনে ভাবে যে এর দ্বারা তার বীরত্ব প্রকাশ পায়, তার পরিবার স্ত্রী তার সম্পূর্ণ আজ্ঞাবহ আর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। অথচ বাস্তবে নিজের স্ত্রীর কাছে সে একজন ছোটলোক হিসেবেই ধীরে ধীরে পরিচিতি লাভ করে।প্রতিটি মানুষেরই ব্যক্তিত্ব রয়েছে, আত্মমর্যাদা আছে। কারো ব্যক্তিত্বে আঘাত করা কিংবা আত্মমর্যাদা ক্ষুণ্ন করা দ্বারা তার অন্তর ভেঙে দেয়। এটি গর্হিত অন্যায় অপরাধ। এ জন্য যারা বুদ্ধিমান, তারা কখনো স্ত্রীকে অপমান করে না।

ইচ্ছামতো জীবনযাপন :
স্বামী নিজের বেলায় ইচ্ছামতো জীবন যাপন করে। তার ক্ষেত্রে তার কোনো বিধি-নিষেধ নেই। অথচ স্ত্রীর জন্য অনেক নিয়ম-কানুন বেঁধে দেয়। স্ত্রীকে পর্দা করে চলতে হবে, টেলিভিশন দেখা যাবে না, গান শোনা নিষেধ, ফেসবুক চালানো নিষেধ, বেগানা পুরুষের দিকে তাকানো একদম হারাম ইত্যাদি। অথচ নিজের বেলায় এসব সবই জায়েজ। এটি একটি চরম ভুল। স্ত্রীর জন্য বিশাল বাধ্যবাধকতার ফিরিস্তি তুলে নিজের বেলায় বেমালুম ভুলে থাকা চরম বোকামি। এর দ্বারা সংসারের শান্তি ধীরে ধীরে ফিকে হতে থাকে। স্ত্রীর জন্য যে নিয়ম স্বামীর জন্য একই নিয়ম। নিজে নিয়ম লঙ্ঘন করে স্ত্রীর কাছে নিয়ম মেনে চলার আশা করা যায় না। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা কি অন্য লোকদের পুণ্যের আদেশ করো আর নিজেদের ভুলে যাও, অথচ তোমরা কিতাব তিলাওয়াতও করো। তোমরা কি এতটুকুও বোঝো না?’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ৪৪)

বিচ্ছেদের হুমকি দেওয়া :
অনেক স্বামীর মধ্যে একটি ভয়ংকর রোগ হলো, স্ত্রীকে তালাকের ভয় দেখানো। কোনো ধরনের মনোমালিন্য হলেই স্ত্রীকে বলে দেওয়া যে আমি তোমাকে ছেড়ে দেব। এ ধরনের কথাবার্তা ভয়ংকর বিপদ ডেকে আনে। স্ত্রী তখন নিজেকে বড্ড অসহায় ভাবতে থাকে। এ দুশ্চিন্তা একসময় তার ভেতরে মানসিক রোগ হিসেবে জেঁকে বসে। সে স্বাভাবিক জীবনের ছন্দ হারিয়ে ফেলে। সব সময় নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। এ জন্য কোনো সুপুরুষ কখনো এ ধরনের কথা মুখ দিয়ে উচ্চারণ করতে পারে না। অথচ আমাদের এ কথা ভালোভাবেই জানা উচিত যে তা শরিয়তে অত্যন্ত ঘৃণিত ও নিন্দনীয় কাজ। ইবনে ওমর (রা.) নবী করিম (সা.) হতে বর্ণনা করেছেন, ‘আল্লাহ তাআলার কাছে নিকৃষ্টতম হালাল বস্তু হলো তালাক।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ২১৭৪)

দোষ ধরার প্রবণতা :
দাম্পত্য জীবন নষ্ট হওয়ার আরেকটি মূল কারণ, ছোট ছোট বিষয়ে স্ত্রীর ভুল ধরা এবং এটাকে অভ্যাসে পরিণত করা। অথচ একজন আদর্শ স্বামীর কর্তব্য স্ত্রীর ছোটখাটো ভুল ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখা। ভুল ধরার প্রবণতা ধীরে ধীরে একে অপরের প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি হতে থাকে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কোনো মুমিন পুরুষ কোনো মুমিন নারীর প্রতি বিদ্বেষ-ঘৃণা পোষণ করবে না; (কেননা) তার কোনো চরিত্র অভ্যাসকে অপছন্দ করলে তার অন্য কোনোটি (চরিত্র-অভ্যাস) সে পছন্দ করবে। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৩৫৪০)

অপবাদ দেওয়া :
অহেতুক স্ত্রীকে সন্দেহ করা। এটি এমন এক ব্যাধি, এর কারণে কত সংসার তছনছ হয়ে গেছে, আল্লাহ মালুম। এ জন্য কোনো ব্যাপারে সুনিশ্চিত স্পষ্ট না হলে সন্দেহ করা থেকে বিরত থাকা। অপবাদ এমন এক জিনিস, যা সহ্য করার ক্ষমতা কেউ-ই রাখে না। সামান্য কোনো কিছু হলেই স্ত্রীকে সন্দেহ করা। স্ত্রী আড়ালে গিয়ে কথা বললে সন্দেহ করা। কিছু হলেই স্ত্রীর ওপর চাপিয়ে দেওয়া। যদি ছেলে কথা না শুনে, তাহলে বলে যে তোমার কারণে আজ ছেলে এমন হয়েছে—এসব বলে স্ত্রীকে প্রতিনিয়ত অপবাদে জর্জরিত করা। এগুলোর কারণে স্ত্রীর মন ভেঙে চৌচির হয়ে যায়। এ জন্য একজন আদর্শ স্বামীর দায়িত্ব এগুলো গুরুত্বসহকারে মেনে চলা। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা, তোমরা অধিক ধারণা থেকে বেঁচে থাকো। নিশ্চয়ই কোনো কোনো ধারণা পাপ।’ (সুরা : হুজুরাত, আয়াত : ১২)

স্ত্রীর আত্মীয়র সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা:
স্ত্রীকে ভালোবাসার পাশাপাশি তার আত্মীয়-স্বজনদেরও ভালোবাসা। তাদের প্রতি ঘৃণা-বিদ্বেষ না রাখা স্বামীর কর্তব্য। স্বামী যদি স্ত্রীর আত্মীয়-স্বজনদের প্রতি ঘৃণা-বিদ্বেষ রাখে, তাহলে ওই স্ত্রীর মনের অবস্থা কী হবে? এ জন্য স্ত্রীর মা-বাবা, ভাই-বোনসহ সবাইকে সম্মান করা। তাদের ব্যাপারে কোনো উল্টাপাল্টা মন্তব্য করলে এর কারণে স্ত্রী চরমভাবে আঘাত পায়। এ জন্য স্বামী-স্ত্রীর কর্তব্য শ্বশুর-শাশুড়িকে শ্রদ্ধা করা। ইসলাম শ্বশুর-শাশুড়িকে পিতা-মাতার মর্যাদা দিয়েছে। তাই স্বামী-স্ত্রীর কর্তব্য শ্বশুর-শাশুড়িকে পিতা-মাতার চোখে দেখা। এর মাধ্যমে উভয়ের মধ্যে ভালোবাসা ও সম্প্রীতির ফুল ফুটবে, ইনশাআল্লাহ।

নিউজ শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *