নিজস্ব প্রতিবেদক.লন্ডন : প্রিয় বাসিন্দা : আমার সালাম এবং শুভেচ্ছা গ্রহন করুন। আপনারা আমাকে দুই বার মেয়র নির্বাচিত করেছেন। টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের প্রথম নির্বাচিত মেয়রের সম্মান দিয়েছেন। এই সমর্থনের জন্য আপনাদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আদায় করছি মহান আল্লাহর শুকরিয়া। আপনাদের একটু সময় চাইবো, যাতে মনোযোগ দিয়ে আমার এই খুব জরুরী চিঠি পড়েন। টাওয়ার হ্যামলেটসে আগামী ৬ মে-এর নির্বাচন ও রেফারেন্ডামের ব্যাপারে কিছু কথা বলতে চাই। আপনাদের ক্ষমতা আপনাদের হাতে রাখা এবং নির্বাচিত মেয়রকে জবাবদিহী করার যে সিস্টেম সেটির ব্যাপারে সচেতন করতে চাই।
আপনারা জানেন, একজন নির্বাচিত মেয়র জন কল্যানে বড় বড় সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা রাখেন,কারন তিনি বিশাল ভোট নিয়ে এবং জনগনের কাছে আগাম প্রতিশ্রূতির তালিকা দিয়েই নির্বাচিত হন। কোনো প্রজেক্ট বা ভালো কাজ বাধার মুখে পড়লে মেয়র ক্ষমতা রাখেন, প্রয়োজনে আইনি চ্যালেন্জের মাধ্যেমে কাজটি নিশ্চিত করার। নির্বাচিত মেয়রকে আপনি সামনা সামনি দেখতে পাবেন। তিনি জনগনের কাছে জবাব দেন, তাদের দরজায় যান। আর আপনি যদি মনে করেন, নির্বাচিত মেয়র সমাজ-কমিউনিটির দিকে ভালো করে নজর দেননি, তাকে নির্বাচনের মাধ্যমে সরিয়ে দিতে পারবেন। কিন্তু মেয়র সিস্টেমটা রাখতে হবে, যাতে সেই মেয়র নির্বাচনের ক্ষমতা আপনার হাতে থাকে। কিন্তু লিডারশীপ সিস্টেমে সামান্য কিছু নেতা, পার্টি বা কাউন্সিলারকেই খুশী করতে হয়। টাউন হলে বসে ব্যক্তি বিশেষের রাজনীতি করতে হয়। কিন্তু মেয়রের অগ্রাধিকার হয় সকল জনগন।
প্রিয় ভাই-বোনেরা,আপনারা দেখেছেন চার বছরের জন্য নির্বাচিত মেয়রের ম্যানেফেস্টো বা প্রতিশ্রুতি কাউন্সিলের এজেন্ডা হিসেবে বাস্তবায়ন হয়। এই মেয়র পদ্ধতি কমিউনিটির যে কাউকে এবং ভবিষ্যত প্রজন্মকে রাজনীতি এবং নির্বাচনে আগ্রহী করে। এ কারনে ১০ বছর আগে আপনারা প্রায় ৬২ হাজার ভোট দিয়ে এই সিস্টেম এনেছিলেন। কভিড নাইনটিনের এই কঠিন সময়ে- ৩৫০ হাজার পাউন্ড খরচ করে এই সিস্টেম নিয়ে আবারো প্রশ্ন তুলে রেফারেন্ডাম দেয়ার কোনো যুক্তি নেই। যেখানে কাউন্সিল অনেক জরুরী সেবা দিতে পারছেনা।
আপনারা অনেকে জানেন, আবার অনেকেই জানেননা, কাউন্সিল এই বিপর্যয়ের সময়ে আপনাদের উপর এই বাড়তি দায়িত্ব দিয়েছে। কভিডের কারনে এবং প্রচারনার অভাবে আমরা বেখেয়ালে যদি এই গুরুত্ত্বপূর্ন দায়িত্ব পালনে সচেতন না থাকি, তাহলে বারায় নির্বাচিত মেয়র সিস্টেম হাত ছাড়া করবো। এর মানে হচ্ছে যাকে ইচ্ছে মেয়র নির্বাচিত করার দায়িত্ব আর আপনাদের হাতে থাকবে না। টাউন হলে বসে কিছু কাউন্সিলার গোপনে একজন লিডার বানাবেন, তিনিই চালাবেন বারা।
৬ মে-এর রেফারেন্ডামে আপনাকে ভোট দিতে হবে-আপনি কী মেয়রাল সিস্টেমের পক্ষে, যেটি বর্তমান সিস্টেম, যেখানে মেয়র এবং ক্যাবিনেট কাউন্সিল পরিচালনা করেন। না, আপনি লিডারশীপ মডেলের পক্ষে-যেখানে লিডার এবং ক্যাবিনেট কাউন্সিল চালান। আমি জোরালো ভাষায় আহবান জানাতে চাই-ভোটের মাধ্যমে একজন মেয়র নির্বাচিত করার সিস্টেম জারি রাখুন। মনে রাখবেন ভোট আপনার জন্য একটি আমানত।
আপনারা চারদিকে দেখুন, একজন নির্বাচিত মেয়র স্ব স্ব এলাকার জন্য অনেক ভালো কাজ করতে পারেন। বড় বড় পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তার যথার্থ ক্ষমতা থাকে। লন্ডন সিটি, লন্ডনের চারটি বারাসহ মানচেষ্টার, লিভারপুল এবং বড় বড় সিটি যেমন নিউ ইয়র্ক, প্যারিস কিংবা ঢাকা সব খানে রয়েছেন নির্বাচিত মেয়র। নির্বাচিত মেয়র মানে-জনগনের ক্ষমতা। আপনারাই সিদ্ধান্ত নেবেন কে হবে আপনাদের মেয়র। কাউকে পছন্দ না হলে তাকে আপনারা বাদ দেবেন, কিন্তু সিস্টেমটা রাখবেন।
২০০৮ ও ২০০৯ সালে লেবার পাটি থেকে আমি কাউন্সিল লিডার ছিলাম। প্রথমবার মাত্র ১৫জন এবং ২য় বার ১৮/১৯ জন কাউন্সিলার আমাকে সমর্থন করেন। আমি বেশীরভাগ ক্ষেত্রে পার্টি এবং কাউন্সিলারদের কাছে দায়বদ্ধ ছিলাম। কিন্তু ২০১০ সালে আমি ১ম বার মেয়র নির্বাচিত হই প্রায় ২৫ হাজার ভোটে আর ২০১৪ সালে প্রায় ৩৮ হাজার ভোটে।এতেই প্রমান হয় নির্বাচিত মেয়র কত বিশাল জনসমর্থন নিয়ে ও দায় দায়িত্ব নিয়ে নির্বাচিত হন। আর এ কারনে তাকে সব সময় জনগনের আশা আকাংখার প্রতিফলন ঘটাতে হয়। আমিও আমার কাউন্সিলার এবং ক্যাবিনেট মেম্বারদের সহযোগিতায় সবচেয়ে বেশী হাউজিং নির্মানের জন্য দেশ সেরা হিসেবে পুরস্কৃত হয়েছিলাম। এডুক্যাশনে ইউকের মধ্যে অনন্য ভূমিকা ছিলো আমাদের টিমের। ড্রাগ এবং ক্রাইমের বিরুদ্ধে লড়তে সব সময় অতিরিক্ত পুলিশ নিয়োগ করেছি আমরা। ছিলো আরো নানা কল্যানকর কাজ। এই সাফল্য ছিলো শুধুমাত্র নির্বাচিত মেয়র হিসেবে আলাদা কিছু ক্ষমতা থাকায়। প্রধানতম কিছু সাফল্যের তালিকা আপনারা এখানে আলাদা ভাবে পড়তে পারবেন।
প্রিয় বাসিন্দা,এই নির্বাচিত মেয়র সিস্টেম কোনো একজনের জন্য নয়। এটা এই বারার সব মানুষের জন্য। এই সমাজ-কমিউনিটির ভবিষ্যত প্রজন্মের নেতৃত্বের জন্য। ব্যক্তিগত বিষয়ে একটু বলতে চাই, জীবনে কাউন্সিলার, লিডার এবং দু বারের মেয়রসহ মোট ৮টি নির্বাচন করেছি। সবগুলোতেই বিজয়ী হয়েছি স্ব যোগ্যতা এবং সবার সমর্থন-দোয়ায়। কিন্তু ২০১৪ সালে ৩৮ হাজার ভোটে ২য় বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হলেও- কতিপয় ব্যাক্তির মামলা এবং মাত্র একজন ডিপুটি জাজের ( সিভিল/ ইলেকশন ট্রাইবুনালের কমিশনার) রায়ে আমাকে কীভাবে মেয়র পদ থেকে সরতে হয়, তা আপনারা খুব ভালো জানেন। শেষ পর্যন্ত চার চারটি পুলিশি তদন্তে কিছুই খুজে পাওয়া যায়নি। প্রায় ৩ বা ৪ মিলিয়ন পাউন্ড খরচ এবং খুঁটিনাটি ক্ষতিয়ে দেখে-পুলিশ বিশাল বিবৃতি দিয়ে বলেছে, তারা আমার বিরুদ্ধে অগ্রসর হওয়ার মতো কেনো প্রমান পায়নি এবং সব তদন্ত বাতিল করেছে। আমি নীতিবান সব কর্মকর্তার কাছে কৃতজ্ঞ।
এতো চ্যালেনজ এবং বিপদের পরও সমাজ-কমিউনিটির আন্তরিক সমর্থনে একটু কমতি হয়নি। বরং বেড়েছে। এ কারনে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি-জনগনের সাথেই থাকবো ।আপনারাই আমাকে শক্তি ও সাহস দিচ্ছেন। আপনাদের অনুপ্রেরনা থাকার পরও কিছু মানুষের অপতপরতার কারনে আমি থেমে যেতে পারিনা। আমি ইতিমধ্যে মেয়র সিস্টেমের পক্ষের ক্যাম্পেইনে সক্রিয় হয়েছি। এতে বিভিন্ন পর্যায়ের সাধারন মানুষ এবং নেতারা যোগ দিচ্ছেন। ইয়েস ফর মেয়র ক্যাম্পেইনে আপনাদেরও সমর্থন আশা করছি।আসুন, ৬ মে সবাই মিলে মেয়র সিস্টেম রক্ষা করি। ভবিষ্যতে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগনের প্রকৃত প্রতিনিধিত্ব আবারো ফিরিয়ে আনি।
আপনাদের লুৎফুর রহমান……..
মেয়র হিসেবে লুৎফুর রহমানের প্রতিশ্রুতি: বাস্তবায়ন-এর কিছু উদাহরণ :
হাউজিং: ৫৫৯০ ঘর নির্মিত : লুতফুর রহমান এবং তাঁর টিম-এর নেতৃত্বে প্রায় ৫ বছরে ৫৫৯০ ঘর নির্মিত হয়েছে। পাইপলাইনে থাকে আরো ৩ হাজার। তার সময় বৃটেনে সর্বোচ্চ সংখ্যক সোস্যাল হাউজ নির্মান-এর সরকারী স্বীকৃতির পাশাপাশি মোট ৭৪ মিলিয়ন পাউন্ড বোনাস মিলে। ১৬৮ মিলিয়ন পাউন্ড খরচে কাউন্সিলের মালিকানাধীন ২৬ হাজার ঘরের কিচেন ও বাথরুম নতুনভাবে তৈরী করতে ডিসেন্ট হোম প্রজেক্টে বাস্তবায়ন হয়।এডুক্যাশনে ৩৮০ মিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগ: লুতফুরের সময়ে শিক্ষা খাতে, স্কুল ভবন নির্মাণ ও সংস্কারে ৩৮০ মিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগ করা হয়েছে। বো এবং সেন্টপলস ওয়ে স্কুলকে সম্পন্ন নতুন করে নির্মান করা হয়। ছিলো মেয়র্স ইউনিভার্সিটি গ্রান্টস এবং রিসেপশন ও ইয়ার-ওয়ান এর বাচ্চাদের জন্য ফ্রি স্কুল ডিনার। সরকারী ভাবে বন্ধ করে দেয়া এডুকেশন মেনটেইনেন্স এলাউন্স (ইএমএএ) বিকল্প ফান্ডিং-এ চালু করা হয়।
কমিউনিটি সেইফটি: ৫৫ জন অতিরিক্ত পুলিশ… ক্রাইম কমিয়ে রাখার জন্য অতিরিক্ত পুলিশ নিয়োগ ও টাওয়ার হ্যামলেটস এনফোর্সমেন্ট অফিসার (থিইও) নিয়োগে অর্থ বরাদ্ধ দেয়া হয়। সিসিটিভি তে অতিরিক্ত বিনিয়োগ ছাড়াও ৫৫ জন অতিরিক্ত পুলিশ-এর মাধ্যমে ডিলার এ ডে প্রোগ্রাম কমিউনিটিতে বিশ্বাস ফিরিয়ে দেয়।
ইয়ুথ সার্ভিস ১০ মিলিয়ন পাউন্ড: ইয়ুথ সার্ভিসে বিশাল বিনিয়োগের পাশাপাশি সাড়ে ৪ মিলিয়ন পাউন্ড বয়ে নির্মিত নতুন একটি আইডিয়া স্টোর খুলে দেওয়া হয়। ওসমানী সেন্টারসহ একাধিক নতুন ইয়ুুথ সেন্টার ভবন উদ্বোধন করা হয়।
করবস্থান: ৩ মিলিয়ন পাউন্ড খরচে সিডকাপে নতুন কমিউনিটি ব্যারিয়েল সাইট (কবরস্থান) প্রতিষ্ঠা করা হয়। যেখানে টাওয়ার হ্যামলেটসের নাগরিকরা অতি স্বল্প খরচে আপনজনকে কবর দিতে পারেন। এই করোনায় বিপুল মানুষের উপকারে এসেছে এই কবরস্থান।
৭ বছর কাউন্সিল ট্যাক্স ফ্রিজ: লুতফুর রহমান ৫ বছর মেয়র হিসেবে এবং ২ বছর লিডার হিসেবে মোট সাত বছর কাউন্সিল ট্যাক্স বৃদ্ধি করেন নি। কাউন্সিল ট্যাক্স বেনিফিটও দেয়া হয় প্রায় ৩৫ হাজার মানুষকে।
Leave a Reply