মোহাম্মদ তাজ উদ্দিন : নিজ হাতে এক মুঠো মাটি দিয়ে এলাম শেষ শয্যায়। হৃদয়ের একুল-ওকুল ছাপিয়ে ওঠা কান্নাকে চাপা দিয়ে বললাম- ‘বিদায় বড় ভাই। বিদায় বন্ধু। বিদায় গণমানুষের নেতা। বিদায় ‘লিজেন্ড’।
এশিয়ার বৃহত্তম ওপেন বাউন্ডারী ওয়াটার বডি- হাকালুকি হাওর। আর এই বিশাল হাওর পারের ছেলে বলেই হয়তো হৃদয়টা ছিল হাওররের মতই বিশাল। সিলেট বিভাগের সবচেয়ে খরশ্রোতা কুশিয়ারার মতই ছিল তার জীবনের গতিপথ। হঠাৎ করেই যেন থেমে গেল সেই জীবনের রথ। ধুমকেতুর মত সিলেটের রাজনীতিতে যার আবির্ভাব। শত প্রতিকূলতার মাঝে যার মাঝে ছিল উল্কার গতি- সেই গতিময় জীবন যেন থেমে গেলে নিমিষেই।
একান্নাবর্তী বিশাল বনেদি পরিবারের মানুষ ছিলেন তিনি। সে কারণে নামটাও ছিল রাশভারী ‘মাহমুদ-উস-সামাদ চৌধুরী’। কিন্তু সেই ভারী নামটি ছাপিয়ে সবার প্রিয় ‘কয়েস ভাই’ হয়ে উঠতে গিয়ে নেমে এসেছিলেন একেবারের গণমানুষের কাতারে।
কখনো কুশিয়ারা তীরের টং দোকানে দেখা যেত খিচুড়ি আর পেয়াজু দিয়ে নাস্তা সারছেন। কখনো দেখা যেত উড়াল জাল নিয়ে নিজেই নেমে পড়েছেন পুকুরে। কখনো বা হাকালুকি হাওরের জলের সাথে মিতালী করতে বৈঠা হাতে নিজেই ধরতেন নৌকায় পাড়ি।
রাত বিরাতে কুশিয়ারার কুলে আড্ডা জমাতেন। সেই সব আড্ডায় তার কন্ঠে শুননাম সাহির লুদিয়ানভির অমর কবিতা- কভি কভি মেরে দিলমে খেয়াল আতা হ্যায়-কি জিন্দেগী তেরি জুলফো কি নরম ছাও মে গুজারনে সাকতি তো শাদাব হো ছাকতি থি।
পুরো কবিতাটা তার মুখস্থ ছিল। এক নিঃশ্বাসে বলে যেতেন। কবিতাটা বলতে বলতে নিজেই তন্ময় হয়ে যেতেন। শ্রোতারা মুগ্ধ হয়ে শুনতো তার আবৃত্তি। অথবা কোন এক সকালে ফজরের নামাজের পর নিজ বাড়ির আঙিনায় পুকুর ঘাটে বসতের পশ্চিম মুখী হয়ে।
পুকুরের অপর পাড়ে সাদা মার্বেলে নিজের গড়া দৃষ্টিনন্দন দেলোয়ার হোসেন চৌধুরী জামে মসজিদের মিনারে তখন আছড়ে পড়ছে ভোরের নবীন আলো। সুললিত কন্ঠে তেলাওয়াত করতেন সুরা আর রাহমান। ‘ফাবি আইয়ায়ি আলা ইরাব্বি কুমা তুকাযযিবান’ বলতে বলতে গাল বেয়ে নেমে আসতো আবেগের অশ্রু।
গত প্রায় ৪০ বছর ধরে অপরূপ এক মুগ্ধতা ছড়িয়ে কালের গর্ভে হারিয়ে গেলেন আমাদের ‘লিভিং লিজেন্ড’ মাহমুদ-উস-সামাদ চৌধুরী এমপি। একটি বাঁধানো ফ্রেমে ছবি হয়ে গেলেন সিলেটের রাজনৈতিক ক্যানভাসের অন্য রকম এক শিল্পী কয়েস চৌধুরী
Leave a Reply