মুহাম্মদ গাজী তারেক রহমান : ১. চরম সামাজিক অবক্ষয়ের নাম ধর্ষণ। যেটি সমাজের প্রতিটি স্তরে ঢুকে গেছে নর্দমার জলের মতো। সদ্য ভূমিষ্ঠ কন্যা শিশুটি শৈশব-কৈশর সুষ্ঠুভাবে পার করে প্রাপ্ত বয়সে উপনীত হওয়ার আগেই ধর্ষণের ছোবলে নিজেকে হারিয়ে ফেলছে অন্ধকার প্রকোষ্ঠে। বর্তমান সমাজ সভ্যতা বহু উচ্চ শিক্ষিত ও আধুনিক প্রজন্ম তৈরি করেছে ঠিকই তবে নীতিবানদের সংখ্যা তেমন একটা বৃদ্ধি করতে পারেনি। ইন্টারনেটের অবাধ ব্যবহারের ফলে দেশে গড়ে ওঠা অপসংস্কৃতির মৃত্যুযাত্রা আমাদেরকে দিন দিন ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
২. আজকাল দূরের কেউ নয় বরং খুব কাছের মানুষ দ্বারাই ধর্ষণের শিকার হচ্ছে আমাদের মেয়েরা। সেকেলের গল্পে যাত্রাপথে ডাকাতদল আক্রমন চালিয়ে নারীশিশুদের ধর্ষণে মেতে উঠতো। বর্তমানে মেয়েদের ইজ্জত লুটে নিতে শিক্ষিত ডাকাতদের তেমন আর কষ্ট করতে হয় না। হাতের ফোন আর ইন্টারনেটই টার্গেট নির্ধারণে ধর্ষকদের প্রধান হাতিয়ার।
৩. আমরা প্রতিদিনই সংবাদপত্র থেকে শুরু করে আশপাশের বিভিন্ন স্থানে ধর্ষণের খবর শুনতে পাচ্ছি। একটি মেয়ে কোথায়-কিভাবে ধর্ষিত হলো? কার এবং কাদের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হলো ইত্যাদি সব তথ্যই আমরা মুহুর্তের মধ্যে পেয়ে যাচ্ছি। এতসব ঘটনা জানার পরেও আমরা কতটুকু সচেতন হচ্ছি? খুবই কম। একটি ঘটনা জানার পর আমরা যদি সেটি থেকে ভালো শিক্ষাই না নিতে পারি তাহলে খবরের কাগজ, ধর্ষণ বিরোধী সমাবেশ, টেলিভিশনের টকশো ইত্যাদি পড়ে-দেখে কি লাভ হলো? ধর্ষণের ফাঁদ সম্পর্কিত এতসব বর্ণনা জানার পরও আমাদের মেয়েরা যদি নিজের বুঝ নিজে জানতে না শিখে তাহলে মেয়েদেরকে ধর্ষণের কবল থেকে কিছুতেই রক্ষা করা যাবেনা। যেমনিভাবে আগুনের দিকে ছুটে আসা পতঙ্গদের মৃত্যু থেকে বাঁচাবার উপায় নেই। পতঙ্গরা আগুনকে আলো মনে করে ছুটে আসে। কিন্তু, মেয়েরা পতঙ্গ নয়। তাদেরকে অবশ্যই ভালোমন্দ বুঝতে হবে।
৪. আজকাল তো আমাদের অধিকাংশ মেয়েরাই প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে শেষ পর্যন্ত ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। প্রেমের সম্পর্ক ও ধর্ষণের উদাহরণ টেনে শেষ করার মতো নয়। তবে, আমাদেরকে খুঁজে বের করতে হবে মেয়েরা কেন অল্প বয়সেই প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে? বর্তমান সময়ে এটির অন্যতম কারণ হচ্ছে- মুভি, টিভি সিরিয়াল। কেননা, অধিকাংশ টিভি সিরিয়াল ও ছায়াছবি তৈরি হয় নায়ক-নায়িকার প্রেম-বিরহ ও মিলনের দৃশ্যকে নির্ভর করে। অন্যদিকে অনিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহারের ফলে ছাত্রছাত্রীরা স্মার্টফোন-স্মার্টটিভিতে যেসকল কন্টেন্ট পেয়ে যাচ্ছে তা উল্লেখ না-ই করলাম। তবে টিভি সিরিয়াল ও মুভির যে কথাটি টানলাম আজ সেটির বাস্তবতাই হচ্ছে মেয়েরা ধর্ষিত হওয়ার পেছনে অন্যতম একটি কারণ। নায়ক-নায়িকার প্রেম সংঘটিত হওয়া, ঘুরতে যাওয়া, বিয়ে বর্হিঃভূত অন্তরঙ্গে লিপ্ত হওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি কাহিনীই আমরা বর্তমান যুগ-সমাজে দেখতে পাচ্ছি। যার প্রভাব হিসেবে সমাজে অল্প বয়সের তরুণ-তরুণীদের মধ্যে গড়ে উঠছে প্রেমের সম্পর্ক। অকালপক্বতার ফলস্বরূপ চারদিকে তাই ধর্ষণ ও ধর্ষিতা তরুণীর কণ্ঠ ভেসে আসছে অহরহ।
৫. তরুণ-তরুণীদের মধ্যে তৈরি হওয়া সম্পর্ক একটু গভীর হলেই সিনেমার পর্দার মতো তারা কাছে কিংবা দূরে কোথাও ঘুরতে যায় অথবা একে-অপরের সাথে দেখা করতে আসে। এসব দেখা করার আসা-যাওয়াতেই যত গন্ডগোল। শুধু তাই নয়, ভিনদেশী সংস্কৃতিতে সবাই এতই আসক্ত যে বার্থডে পার্টি, অমুক পার্টি-তমুক পার্টির কথা বলে বাসা থেকে বের হয়ে শেষ পর্যন্ত বন্ধু বা পছন্দের ব্যক্তির দ্বারা ধর্ষণের শিকার হচ্ছে মেয়েরা। আর এই ঘটনাগুলো দেশের পত্র-পত্রিকাগুলোতে প্রতিদিনই খবর আকারে আমাদের চোখে পড়ছে অথচ এ থেকে নিজেকে বাঁচাতে সামান্য সচেতনতাও আমাদের মাঝে পরিলক্ষিত হচ্ছেনা। যার বাস্তবচিত্র তথাকথিত এই দিবস, সেই দিবসগুলো এলেই রিক্সা, গাড়ি, পার্ক, রেস্টুরেন্ট ও খোলা স্থানগুলোতে উঠতি বয়সী যুবক-যুবতীদের মধ্যে দেখা যায়।
৬. অবৈধ যৌন খায়েশ জোর করেই হোক, পার্টি কিংবা ঘুরতে যাওয়ার কথা বলেই ঘটুক এক্ষেত্রে লোকসানের হিসেবটা মেয়েদেরই বহন করতে হয়। কেননা, অবৈধ শারিরীক সম্পর্কে লিপ্ত হওয়া পরবর্তী হাজার কিছু হলেও একটি মেয়ে কখনোই তার সতীত্ব ফিরে পায়না। তাই আমাদের বোনদের বোঝা উচিত বিবাহ বহির্ভূত শারিরীক সম্পর্ক তো দূরের কথা সিনেমা জগতের মতো বাস্তব জীবনে প্রেম নামক অগ্নিস্তূপে ঝাঁপ দেয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হবে এবং সেই সাথে আশপাশের অন্য বোনকেও এ সম্পর্কে সঠিক ধারণা দিতে হবে। তাহলেই আমরা সমাজ থেকে ধর্ষণের মতো ভয়াবহ ব্যাধি দূর করতে পারব।
লেখক- সাংবাদিক।
Leave a Reply