ইমাম মেহেদী : তরুণ বয়সে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে তারুণ্যকে জয় করেছেন ড. চৌধুরী শহীদ কাদের। চট্টগ্রামে জন্ম নেওয়া চৌধুরী শহীদ কাদের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস বিভাগে পড়াশোনা অবস্থায় উপমহাদেশেরে প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুনের সঙ্গে গবেষণায় যুক্ত হন। দিনে দিনে হয়ে ওঠেন তার উত্তরসূরি। ইতোমধ্যে এই অল্প বয়সে তার ১৭ টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে।
বর্তমানে তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি যুক্ত রয়েছেন অসাম্প্রদায়িক ইতিহাস চর্চার প্রতিষ্ঠান ‘বাংলাদেশ ইতিহাস সম্মিলনী’র সাধারণ সম্পাদক পদে। এছাড়াও দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন খুলনায় অবস্থিত দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র গণহত্যা জাদুঘর এর ট্রাস্টি সম্পাদক হিসেবে। বর্তমানে খুলনায় স্থায়ীভাবে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে গণহত্যা জাদুঘরের মতো একটি বৃহৎ জাদুঘর স্থাপনের কাজ চলছে। যা বিশ্বের ইতিহাসে একটি নতুন সংযোজন।
এ ছাড়া সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে ‘গণহত্যা-নির্যাতন ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণা কেন্দ্র’ প্রকল্পের পরিচালক (প্রশাসন) হিসেবেও তিনি নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। যেটি বর্তমানে দেশের সবচেয়ে বড় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান।তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে ২০১২ সালে সম্পাদনা করেছেন ‘ব্রাহ্ম স্কুল থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়’। এই গ্রন্থে মূলত দেড় শতক আগে পুরান ঢাকার ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ব্রাহ্ম স্কুল থেকে কিভাবে আজকের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর সেটাই তুলে ধরেছেন।
এছাড়াও মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক তার গবেষণা গ্রন্থগুলো হলো- ‘মুজাফরাবাদ গণহত্যা’, ‘জগতমল্লপাড়া গণহত্যা’, ‘ঊনসত্তর পাড়া গণহত্যা’, ‘বন্দর গ্রাম গণহত্যা’, ‘পাহাড়তলী গণহত্যা’ ও ‘নাথপাড়া গণহত্যা’। মুক্তিযুদ্ধের ভিন্ন ধরণের বিষয়গুলো গবেষণা নিয়ে গবেষণা করে যাচ্ছেন নিয়মিত।
ইতিহাস থেকে তুলে এনেছেন একাত্তরে শরণার্থী হিসেবে অবস্থান করা মানুষের জীবনের দিনগুলির ইতিহাস। প্রায় এক কোটি শরণার্থীর স্বাস্থ্যসেবা, ভয়াবহ কলেরা, চোখ ওঠা রোগ প্রকোপ, প্রায় সাত লক্ষ শরণার্থীর মৃত্যু মুক্তিযুদ্ধের ভিন্ন একটি অধ্যায়। এই বিষয়গুলো নিয়ে তিনি লিখেছেন আরেকটি বই ‘মুক্তিযুদ্ধে ভারতের চিকিৎসা সহায়তা’।
কবিগান নিয়ে লিখেছেন- ‘মুক্তিযুদ্ধে বরাকের কবিতা ও কবিগান’। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক তার আরেকটি গ্রন্থ- ‘মুক্তিযুদ্ধে ত্রিপুরা : শরণার্থী’, ‘সংবাদপত্র ও সাধারণ মানুষ’। অধ্যাপক মুনতাসীর মামুনের সাথে যৌথভাবে প্রকাশিত হয়েছে ‘গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ’ তিনটি। মুক্তিযুদ্ধ কোষ এর মত গুরুত্বপূর্ণ দেশি, বিদেশি পত্র-পত্রিকা ও জার্নালে মুক্তিযুদ্ধ এবং গণহত্যা নিয়েও প্রকাশিত হয়েছে বহু গবেষণা প্রবন্ধ।
২০২০ সালের বইমেলায় চৌধুরী শহীদ কাদেরের দুটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে তরুণ প্রজন্মের চোখে বঙ্গবন্ধু ও গণহত্যা-বধ্যভূমি ও গণকবর জরিপ : চট্টগ্রাম জেলা।
ইতিহাসকে জয় করা তরুণ এই গবেষক তার কাজের স্বীকৃতি হিসেবে সময় প্রকাশন থেকে প্রকাশিত ‘মুক্তিযুদ্ধে ভারতের চিকিৎসা সহায়তা’ বইটির জন্য ২০১৯ সালে পেয়েছেন ‘কালি ও কলম’ পুরস্কার। ২০১৮ সালে পেয়েছেন ‘জাতীয় অধ্যাপক সালাউদ্দীন আহমেদ পুরস্কার’। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা সংসদ কর্তৃক পেয়েছেন ‘তরুণ মুক্তিযুদ্ধ গবেষক’ পুরস্কারও।পহেলা মার্চ তারুণ্যকে জয়করা ইতিহাস গবেষক চৌধুরী শহীদ কাদেরের শুভ জন্মদিন। আপনি ভালো থাকবেন এবং ইতিহাস চর্চা অব্যাহত রাখবেন। আপনার ইতিহাস চর্চার সেবায় আমরা শুদ্ধ হবো সেকথা আজ বলা ও ভাবা নিরর্থক নয়। আমাদের ইতিহাস বিশ্বে ছড়িয়ে যাবে আপনার মতো তরুণের হাত ধরে সেই প্রত্যাশা রাখি।
খোলা চিঠি বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব.
Leave a Reply